Friday, May 31, 2019

গোয়া ডায়েরীঃ আলো এবং অন্ধকার - প্রগতি বৈরাগী






কয়েক কুচি আলোঃ
পালোলেম, গোয়ার সব থেকে “হট অ্যান্ড হ্যাপেনিং” সি বিচ। পান্না-সবুজ স্বচ্ছতোয়া জল আর তার ধার ঘেঁষে রূপোর মিশেল দেওয়া পিতল গলানো সৈকত। পার্কিং প্লেস থেকেই শুরু হয়েছে সমুদ্রে যাওয়ার পায়ে চলা পথ। গেটের মুখটিতেই ছোট্ট একটুখানি দেবস্থান, এই একরত্তি কাঁচের ঘরখানি সবখানের, সবরাজ্যের চালকদের বড়ো ভরসার জায়গা।

একই ছাউনির তলায় পাশাপাশি গা ঘেঁষাঘেঁষি করে আছেন যীশু খ্রীষ্ট, নাদুস নুদুস গণপতি বাপ্পা, পার্বতীকে সাথে নিয়ে শিবঠাকুর আর ফ্যামিলি গ্রুপফটোতে ক্ষুদেরা যেমন সামনের লাইনে দাঁড়ায়, তেমনি রয়েছে রথের মেলায় কিনে আনা ঝুলন সাজাবার ঘরের মত এই টুকুখানিক বুড়ো আঙুল প্রমাণ কাবা মসজিদ।

ঝগড়া-কাজিয়া, ত্রিশুল, ক্রুশ, তলোয়ার, তাজিয়ার লড়াইকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে কী মিঠে মিলেমিশে আছেন সবকটিতে! মনে হল “রোজ কত কি ঘটে যাহাতাহা, এমন কেন সত্যি হয়না আহা”....

ওঁরা যদি পারেন, তবে আমরাই বা নয় কেন!

অন্ধকার, সহস্র যুগের:
পায়ের তলায় সরে সরে যাচ্ছে সবুজে নীল স্রোত, আয়নাসমান জলের নীচে আশ্চর্য ঠিকরোচ্ছে রকমারি ঝিনুক, তারা মাছ, ছিটে ছিটে রঙীন শঙ্খ আর অন্য অন‍্য নোনা পানির  বাসিন্দারা, হাতে তুলে দেখলে বোঝা যায় তার বেশির ভাগ-ই জীবন্ত, ব‍্যস্তসমস্ত হয়ে কিলবিলোয় অথবা দ্রুত আইকম বাইকম গোলাপি শুঁড় বের করে পালাতে চায় জলের দিকে।

দলের সবাই এদিক ওদিক, কেউ হিম হিম বিয়ার নিয়ে বসে পড়েছে বালিয়াড়িতে, কেউ খোঁজ নিতে গেছে সমুদ্রের তীর ঘেঁষা অথেনটিক গোয়ানিজ রেস্তোরাঁ “দ্রৌপদী’স ইন”-এর অথেনটিসিটি আর সেখানকার টাইগার প্রন সত্যিই বাঘের থাবার সাইজের কিনা!

সব থেকে ছোট্ট সদস্যটি তার মায়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ঝিনুক কুড়োচ্ছে আর এতোল বেতোল প্ল‍্যান শোনাচ্ছে ঘর সাজানোর। আমি সবার থেকে, একটু দূরে জলের কাছাকাছি, সমুদ্রে পা ডুবোচ্চি আর ছবি তুলছি। বিচ ভলিবল, ট্যুরিষ্টদের সমুদ্র উল্লাস, বিদেশিনীদের সানবাথ, স্যান্ড ক্যাসল তৈরিতে ব্যস্ত ছোট্ট থেকে বড়ো বাচ্চারা।

শরীর পেতে নিচ্ছি ঝাপটা হাওয়ার জড়িয়ে ধরা নোনা আদর,  প্রতি শ্বাসে কলজে পুড়িয়ে দিচ্ছে রোদ্দুরের ঝাঁঝালো ঘ্রাণ । পুড়তে পুড়তে পা পা এগিয়ে যাচ্ছি জলের দিকে।

"মেরে রসকে কয়ওঁর, তুনে পেহলি নজর" ঝনাৎ করে মাথা মধ্যে লাফিয়ে পড়ে শব্দগুলো। গান নয়, পুরুষালী গলায় বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে উচ্চারণ আর তার সাথে চার পাঁচ জনের গা গুলিয়ে ওঠা হাসি।



পিছনে দাঁড়িয়ে আছে গোয়া পুলিশের একটা জিপ, জিপে বসে দাঁড়িয়ে কয়েকজন পুলিশ কর্মী, সম্ভবত ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তার  জন্যই। প্রত্যেক জোড়া চোখ থেকে ঝুলছে একটা করে লকলকে জিভ, চেটে চেটে খাচ্ছে আমার খোলা কাঁধ, কোমর, পা। সি বিচে তো অনেকেই আছেন, স্বর্ণকেশী, স্বর্ণবর্ণা বেতস লতার মত সুন্দরীরা, তবে আমিই কেন!
আসলে ওদের চোখ আটকে গেছে এঁটেল মাটির মতো নরম সরম গড়ন আর তামা রঙের গোলগাল মুখে যাতে বাঙালিয়ানা আর ভারতীয়ত্ব বড় স্পষ্ট। আঘাত লেগেছে ওদের ঠুনকো অভিমানে, ভারতীয় মেয়ে হয়ে কেন এমন স্বল্পপোষাকে একা স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াবে, বেড়ানোর সাহস পাবে?
তাই ওরা আমাকে ভয় পাওয়াতে চাইছে, আমার ভয় ওদের যৌন সুড়সুড়ি বাড়িয়ে দেবে। ওদের শিশ্নাগ্রে জমা হবে সমস্ত পৌরুষ, মনে মনে ছিঁড়ে ফেলবে আমার বুক আর নিম্নাংগের পোষাক।
ওরা শুধু অপেক্ষা করছে আমার ভয় পাওয়ার, পিছু হঠার।

No comments:

Post a Comment

একঝলকে

ভেঙে যাওয়ার পরে- একটি উপন্যাসের পাঠপ্রতিক্রিয়া- রিমি মুৎসুদ্দি

  ‘মৃত্যুতে শোক থাকে কিন্তু সামাজিক অপযশ থাকে না । ’ ‘ মৃত্যু ’ ‘ শোক ’ ‘ অপযশ ’- একটা গোটা উপন্যাস থেকে এই তিনটে শব্দই কেন...

পছন্দের ক্রম