Thursday, May 30, 2019

অদিতি বসু রায়-এর কবিতা





লক্ষ্মী মুর্মু

লক্ষ্মী বলে ডেকেছিল মা-বাপ
ঘট-পেঁচা-কুসুম শতদল আসে নি যদিও
তাই দেহ থেকে মাটি খসে গেল দ্রুত
 জঙ্গলে দাবানল এবং
দেখা গেল খড়
খড় মানে ভঙ্গুর জ্বালানি, জানত সক্কলে

লক্ষ্মীর উন্মোচিত, চেঁড়াখোঁড়া যোনী  ভাইর্যাল হল, অতঃপর

আসিফা


আসিফা জ্যোৎস্নার গন্ধ পেত, বলেছে বন্ধুরাআর সারাদিন,
বনে বনে ফুল ফুটিয়ে বেড়াত ।
তার বেগুনি সোয়েটার ভরে যেত জোনাকি ও প্রজাপতিতে
 মাথায় হুটোপাটি লোরির খেলাধুলোর দিনে।
বিকেলের ঝোঁকে ঘরে ফিরে, সে পুতুল সাজাত রোজ সেই সঙ্গে
মায়ের কোলে টুপটাপ ঝড়ে পড়ত তারা আর কুঁড়ি।

এসবে স্নেহ দেবেন দেবতা, ভেবেছিলে? ভেবেছিলে কপালে চুমো নামবে তার?
মন্দিরে খোঁজেনি তাই বাবা।
নাম ধরে ডাকেনি মন্ত্র শুনে।
 নাম মিলিয়ে গেছে ধ্বনি-প্রতিধ্বনিসহ।
ওদিকে তখন পুষ্পপাত্রে রক্ত –
-      বালিকার যোনি-রক্ত। রক্ত মানে উল্লাস। উল্লাসের হাতে ত্রিশুল। মুখে স্তব। কপালে ‘জয় শ্রীরাম’।

সে সময় আগুন জ্বলেনি কাশ্মিরে
হিম পড়ছিল বলে, কেউ শুনতে পায় নি আতর্নাদ..
 দেখতে পায়নি দেবতার কন্ঠে আসব – নখের ধার- লিঙ্গের তীব্র ক্রোধ।
সুতরাং,
কেউ বাঁচালো না তাকে।

শিশুশবে আবারও উপগত হয়ে উপাসক-দলের সুখ হল খুব।
আল্লাহ শুনতে পেলেন না … শরশয্যা সম্পূর্ণ হল।


অ-সতীকথন


সে জানে, সে অনেক কিছু পারে না।
 সে চিৎকার শিখেছে অসভ্যের মতো। মানিয়ে চলতে গেলে তার দমবন্ধ। এ
কটা মুখও তার মনে নেই, সন্ধেয় ঝোঁকে ফোন করার জন্য।
প্রিয় বন্ধুর মতে, সে খুব বোরিং।কারণ, ডিস্কো ঠেক পছন্দ করতে পারে না।

প্রেমিক জানিয়েছে, প্রতিটি ঝগড়াতেও সুললিত কণ্ঠ 'মেনটেন' করে সভ্য মেয়েরা।
প্রতিবেশিদের কাছে বিয়ে-ভাঙ্গা মেয়ে বরাবরের বজ্জাত।
স্বয়ং কোর্ট বলে দিচ্ছে, রান্না শেখা জরুরি।

সে আসলে সমস্ত ভুলে যায়।
দিন-তারিখ-জ্যামিতি বক্স -
বিকেলের শেষ ঘুড়ি থাকা পর্যন্ত সে জানালার ধারে বসে বসে ঘুম দ্যাখে।
আজকাল ঘরের চৌকাঠ পেরতেও তার ভয়
ভয়...
তীব্র অনীহা তার ঘর ফেলে দূরে যেতে। 
এখন  জ্বর আসে মাঝে মাঝে। একটা, দুটো, তিনটে ক্রোসিন আন্দাজে খেয়ে নেয় সে। আর রোজ ভারী রেগে ঘুম থেকে উঠে চেঁচায় সকালে।।

এ এসব বিশ্বাসও করে। সে বিশ্বাস করে, গতকাল বাজ পড়েছিল, তার বদমাইশির জন্যই। দুনিয়ার যত অন্ধকার সে আছে বলে। সে না থাকলে, ভারতবর্ষ, নরওয়ে হয়ে যেতে পারতো। 
সুতরাং সে মনে মনে তারা গোনে।
 জানলা বন্ধ করে দিয়ে, ভেতরের ঘরের এককোণে বসে
চার্জ নেই জেনেও ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে, মা কলিং দেখার আশায়

মেয়েগুলো


 মেয়েগুলো আগুনে ঝাঁপ খায় সেই কবে থেকে
চিতোরগড় থেকে ঢাকাআড়াইশো বছর ধরে মেয়েরা আগুনে ঘুমাতে যায়
আঁচল পুড়ে ধরে যায় খোঁপাখোঁপার গল্পে ব্রীড়া থাকে খুব
মেয়েগুলো বোঝে না কিছুই
তারা ডানদিকে গেলে দোষ, বামদিকে গেলে ভয়
আর সোজা রাস্তায় বাঘ-ভাল্লুক
পেছনে কী আছে সে তো সব্বাই জানে
তোমরা ভাত খাও – তোমাদের মন্দিরে পুজো হয়
মসজিদের আজানে ঘুম ভাঙে পাখিদের
মেয়েগুলো পোড়ে
মেয়েগুলো ধূপ জ্বালালেও বদনাম
মেয়েগুলো কোরান শরিফ নিয়ে কাঁদে

মোদ্দা কথা হল, মেয়েগুলো পুড়ে যায় শেষে-মধ্যে-শুরুতে
মেয়েদের পোড়াই নিয়তি...



1 comment:

একঝলকে

ভেঙে যাওয়ার পরে- একটি উপন্যাসের পাঠপ্রতিক্রিয়া- রিমি মুৎসুদ্দি

  ‘মৃত্যুতে শোক থাকে কিন্তু সামাজিক অপযশ থাকে না । ’ ‘ মৃত্যু ’ ‘ শোক ’ ‘ অপযশ ’- একটা গোটা উপন্যাস থেকে এই তিনটে শব্দই কেন...

পছন্দের ক্রম