কয়েকটি কবিতা
গোধূলিমন্দির
তুমি মন্দিরের দুয়ার।
ভারী। কারুকার্যময়।
অপেক্ষায় একখানি সমুদ্র
তার কয়েকটুকরো ঢেউ
দিনে ও রাতে
রূপোর গিলটি করা পদপ্রান্তে
লুটিয়ে লুটিয়ে পড়ে।
তুমি সিংহমুখ। পেতলের ঘড়া।
আমাদের প্রচেষ্টা তোমাকে ঠেলে
গর্ভপ্রান্তে প্রবেশ করতে চায়।
প্রবেশ –প্রবেশ –
সৃষ্টিরও আগে এই শব্দ ধ্বনিত হত
মহাকাশের ইশারাকোণ থেকে
তুমি ভার। মরিচাময় স্তব্ধতা।
মানুষের চলাচল
উদ্ভিদের চলাচল
তাদের শেকড়,ঝুড়িবিস্তার
প্রাচীণতা বোঝানোর জঙ্গল ও প্রবাদ
তুমি চন্দ্রালোক, তুমি করোটি
সুর্যাস্তে তলোয়ার
আদিগন্ত বালির হতাশা
নারকোল গাছের বিন্দুসম,
তবু ছায়া তুমি
তুমি মন্দিরের প্রথম নিষেধ
তুমি নিষেধ ঠেলা দুই হাত
আমাদের প্রচেষ্টা বিশ্রামে ধ্বসে
আসে
আমাদের ঢেউ চন্দ্রালোকে স্থির
একবিন্দু,পুরাতন
একবিন্দু দাও পুরাতন কোনও পৃথিবী
আমার কোলে দাও,
আমি কখনও দেখিনি অমৃতবিন্দু, আমি কখনও বাঁচিনি
পূর্ণশ্বাস,
আমি কী ভালোবাসিলাম! আমি কী ছাই লিখে
রাখলাম!
ধরাই গেলনা এতদিনে বাতাস, ও বাতাস কী কথা
বলে!
সুভদ্র দরোজার ধারে দাঁড়িয়ে দেখেই
গেলাম, তুমি কেমন ঘুমাও
অন্যের ঘুমে ঘুমাও —
বস্তুর ইতিহাস, স্বলিখিত
চাদরটি দিয়েছিল রাঙাবৌ, তার হাত ছুঁয়ে
চাদর এবাড়িতে বিধিলিপি এল।
আড়াআড়ি পাতা হল ফুলছাপ মন্বন্তর
পার হল, তাদের বিবাহের
রূপকথা
শেষ হল
জিনিসপত্তরের ইতিহাস
নিজে নিজে লেখা হয়,
স্টিলের বাটিটি
মাজা হয় খাওয়া হয় মাজা হয় বছরের
দাগ ধরে কোণায়, মানুষের কোরকে,
ছোটকর্তার জিহ্বায়
আটত্রিশ বছরের স্বাদের কণিকা এসে
লাগে
মালিকে মালিকে কী তুমুল ঝগড়া গলি
জুড়ে ,
মুখোমুখি বাড়িদুটি, সিঁড়িঘর ঝুঁকে
এসে চুমো খায়
রাত হলে, ঘড়ি ভেঙে যায়,
মণিবন্ধ চলে
জিনিসপত্রের ইতিহাস , ধীর হাতে লেখা,
গাছেদের থেকে কিছু দীর্ঘ তাদের আবেগ, বিশ্বস্ততা,
গাছেদের মত বিখ্যাত নয় ততো।
প্রতিটি ছোটবড় পাথরে লেখা
একস্থানে স্থির থাকার কাব্য,
সাঁড়াশিটি বোঝে তার বয়স বয়ে যাচ্ছে
ভাঙা ক্লিপটি কীকরে যেন বুঝে যায়, সে বাতিল
বাতিল জুতোটি, চামড়ার সুটকেস,
চশমার খাপ —
লেখা হয়
শামুকের চলে যাওয়া দীর্ঘ ভেজা দাগে
লেখা হয়
আমাদের কেউ লিখেছিল তারাদের
গায়ে গায়ে
১/
পান্থপাদপ। ঐ তার শতশত
মন মাটি ঠেলে ঠেলে, মাটির কণা ও কণাদের পরিচিতি
পরিচিত পরিবার প্রতিবেশী ঠেলে ঠেলে জায়গা করে নিচ্ছে। পান্থ, তার ঝুড়ির নীচে ঠাঁই নাও, জল নাও নিজের ছায়াটুকু বিলিয়ে যাও যাতায়াতের পথে, কোথায় একান্ত শাবক কাঁদছে, গেরস্থের
আশেপাশে পাখিরা জল পায়না, দেখো, তাদের দেখাশোনা তুমি কার ঘাড়ে ফেলে শীতের রাত চুকতে না চুকতে , রাস্তার মোড়ে গ্যাসবাতি জাগরুক, এখনও অটোরিক্সা এল না, চলে যাচ্ছো, অনিশ্চিতে, নিষ্ঠুর বাসে চেপে
এমন একখানি রাত আসুক, এই
সব চলে যাওয়া, শীতের রাত চিরে বাস, কুয়াশার আত্মভেদী দেওয়াল,
আমি তুলে রাখব। আজ কাগজ সীমিত আজ এর উত্তর আমি পরের পৃষ্ঠার নামে তুলে রাখলাম আর বইখানি হারিয়ে গেল শতাব্দীর পথে
২/
আমাদের কেউ লিখেছিল
তারাদের গায়ে গায়ে— আমাদের কেউ কেন লিখবে! যখন অক্ষর ভাষার বাঁধনে থাকছে না, বাংলা লিপি নাস্তালিকে ঝুঁকছে উর্দু তার
স্তনভার চাপিয়ে দিচ্ছে খরোষ্টির ওপর আজ কতো কতো
ভাষাবীদ এল কেউ এই ভাষা বোঝে কেউ ওই পৃথিবীর জগতের
প্রাচীনকে খন্ডে খন্ডে দেখে— তারা সম্মিলিত
মেধা, তারা সম্মিলিত ভালোবাসা নিয়ে এই লিপির ওপর
ঝুঁকে পড়ে, পাঠোদ্ধার তখন কোথায় কোন দূরে, তারা এই লিপি ছুঁয়ে দেখে, তাদের হাতে
অবিশ্বাস
তাদের আঙুল মমি হয়ে যায়
৩/
যে শতখান মন পৃথিবীর
ভরকেন্দ্রে নেমেছিল, তারা এখন অবাধ্য আগুনের গোলা, তরুণ, তরল, সরস্বতী পূজোর দিন একগুঁয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে, রাত হলেও নাছোড় নিজের চারপাশে পাক খায়, বাড়ি যায় না।
যে শতখান মনের দোষের
কণামাত্র আমাদের বাড়ির ইঁটকাঠ পরিশ্রম দুশ্চিন্তা
খরচ আশঙ্কা হিসেব চাতুরি সিমেন্ট মিস্তিরি মালিক আর তার ছাতার ভেতর সেঁধিয়ে গেছিল, তার কী হল? দীনজনে জনে জনে ভাগ করে রোদ্দুর রুটির
ফুলকো পায়েসের সর জুতোর টোকেন— রাখতে হবে হিসেব রাখতে হবে, এ প্রাণের শহরে কেউ, কেউ, এমনকি একটা কুকুরবাচ্চাও যেন ভুখা না ঘুমায়। সকলের আঙুলের ডগায় মধু মাখা থাকে। যেন।
No comments:
Post a Comment