১
অফিস থেকে ফিরছি। এমজি রোডের মাথায়
কাঁঠাল পাতা খাচ্ছে রামছাগল। আর বিরসবদনে বসে আছে মেহেবুব ব্যান্ড। হঠাৎ গলা
খাঁকারি শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখি বাবা। বলল কে একজন দেখা করতে চায়,
তাঁকে নিয়েই অপেক্ষা করছিল। বললাম,
বাড়িতেই ডাকতে পারতে। বাবা উত্তর দিল না। হাঁটতে
হাঁটতে প্রায় পূরবী পর্যন্ত চলে এসেছি। সাড়াশব্দ না পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি বাবা
ধাঁ। তিনজন কর্পোরেট কোট-টাই পরা লোক আমার পিছনে পিছনে আসছে। কী চাই?
তিনজন সমস্বরে বলল,
সোজা চলুন,
প্লাটফর্মে উঠে বলছি। প্লাটফর্মের ধার ঘেষে
দাঁড়ালাম। ফাঁকা, মানুষ
নেই, আজ কি রোববার! তাহলে
আমার অফিস কেন! লোকগুলি কথা বলতে শুরু করল।
-আসলে আপনার প্রতিদিন লিখতে বসে বানান
ভুল হয়ে যাচ্ছে।
-জানি। চাপের মুখে সিলি মিস্টেক।
- কিন্তু অফিসে এটা চলতে পারে না।
অনেকের সঙ্গে কথা বলে রোগটা সারিয়েছি আমরা অতীতে,
কিন্তু আপনারটা অ্যাকিউট। তিনটে ইঞ্জেকশন নিতে হবে।
প্রতি সপ্তাহে একটা। প্রথমটা আজই।
এই বলে একটা বেঁটে,
থুতনিতে দাঁড়ি লোক সিরিঞ্জে থকথকে কী একটা ভরতে
লাগল।
-কিন্তু বাবা কোথায় গেল?
- বাড়ি চলে গেছে।
-আমার কোন বানানটা সব থেকে বেশি ভুল হয়?
-জীবনানন্দ।
(স্বপ্ন-শয়নযান,
২৪ এপ্রিল, ২০১৯।)
২
সস্তার জুতো পরে পায়ে একটা ইনফেকশান
হয়েছে। পায়ের লাম্পটায় দিতে হচ্ছে টেরাকোট ৫০ ইঞ্জেকশন। ছোটবেলার বন্ধু শুভঙ্কর
পাহা়ড়ে বেড়াতে যায়, লাম্পটায়
যেই সুই ভরেছে মাথায় মনে হল অনুষ্কাশঙ্করের আঙুল কেটে রক্ত বেরোচ্ছে। স্থির হয়ে
ভাবতে বসলাম, বলে
রাখা ভাল অফ ডে, এই
জুতোটা পরে কোথায় কোথায় গিয়েছি।
আগের জুতোর সোয়েট ক্ষয়ে পায়ের চেটো
জ্বালা করছিল তাই বছর দুয়েক আগে পুজোর মাসে এই জুতোটা। পায়ে গলিয়ে রোজ অফিস
যাচ্ছি। একদিন বাল ধাঁ। পাথরচাপুড়ি মেলা। মেহেবুব শাহ ওলির মাজার। ওলি শব্দের
অর্থ বন্ধু। শোনা যায়, মারফতি
মতের মানুষ ওলি পারস্য দেশ থেকে পায়ে হেঁটে এদেশে এসেছি। ১১৫ বছরে পড়ল তাঁর উরস।
প্রিয়জনের নামে চাঁদর চড়াতে এসেছে লাখ লোক।
আখড়া বানিয়েছে। শেখ আরজুল,
বর্ধমানের ভাগচাষী। হারমোনিয়াম আছে,
জমি নেই। আর আছে আছে এক বন্ধু,
ঢোল বাজিয়ে। রাতের চাঁদ হানা দেবে চকিতে,
আরজুল গাইবে- নবী আলি এই দুজনে,
কলমাদাতার ফিনে,
লালন কয় যতই লড়ো সে ভিন্ন পার পাবে না
, কাজের
বেলা পরশমনি আর সময় কেউ চিনে না।
(বাদামপাহাড়ে আমি যাব না কখনও।)
৩
আমার প্রিয় কবি পার্থ কাঞ্জিলালের লেখা
'বালককালের
প্রথম বেশ্যা'
আমার মতে শ্রেষ্ঠ ভ্রমণ কবিতা। আর তোমার ইন্তেকাল
হবে তুমি যদি মণীন্দ্র গুপ্তের ‘ভবতারিণী’ কবিতাটি পড়ো।
৪
আমার ছাতারা বারবার না বলে বেড়াতে
যায়। সুখেন দাসের মতো মেঘ আলোলবিলোল করে আকাশে। গেট খুলে দাও পাগলখানার। বেড়াতে
যাবে সঞ্জয় ভট্টাচার্যরা।
৫
ট্যাক্সিভ্রমণের মত বড় ব্যাপার কিছু নেই। একথা আমি বলেছি সম্বিতকে, পয়সা বাঁচাই রীতিমতো, ও গা করেনি। একবার এক ট্যাক্সিওয়ালা বলল সে যাত্রীদের জন্যে দাঁড়ায় কারণ গুরুগ্রন্থসাহেবের দ্বিতীয় কথা-অন্যের কথা শোনো, শোনা থেকেই পৃথিবী তৈরি হয়েছে।
একবার এক বার মালিক ট্যাক্সি চড়ে ডেস্টিনেশানে পৌঁছল। কিছুক্ষণ বাদেই রিংটোনে বোঝা গেল বাবু ফোন ফেলে গিয়েছে, সহৃদয় ট্যাক্সিওয়ালা ফোনে কথা বলে বারমালিকের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে সেই ফোন। বারমালিকের পরিবার লোকটিকে ধন্যবাদ দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, বাবু কোথায় নামলেন, ট্যাক্সিওয়ালা বললেন- জী ম্যাডাম সোনাগাছি।
সোনাগাছি ভ্রমণে গিয়েছি আমি আর বন্ধু, নাম বলব না। একটা ঘরে তিনটে খাট, কোনায় একটা সরু নালা, দাঁড়িয়ে মোতে বেশ্যারা, ঝটপট। আর এই যে আমি খাটে, তাকে বাল থাক বলে নেমে দূরে ডিম লাইটের আলোয় দাঁড়িয়ে দেখি ইনশাল্লাহ এ কী সেট! তিনটে সাদা পর্দা, ফ্যানের হাওয়ায় দুলছে, আর নানা ছন্দে উঠছে নামছে ছটা শরীর, কোনও আবেগ নেই, ধূপকাঠি মুতের গন্ধ ছাড়া কোনও গন্ধও নেই। এত ভাল সেট ডিজাইন আমি আর কোনও থিয়েটারে দেখিনি।
৬
ট্যাক্সিভ্রমণের মত বড় ব্যাপার কিছু নেই। একথা আমি বলেছি সম্বিতকে, পয়সা বাঁচাই রীতিমতো, ও গা করেনি। একবার এক ট্যাক্সিওয়ালা বলল সে যাত্রীদের জন্যে দাঁড়ায় কারণ গুরুগ্রন্থসাহেবের দ্বিতীয় কথা-অন্যের কথা শোনো, শোনা থেকেই পৃথিবী তৈরি হয়েছে।
একবার এক বার মালিক ট্যাক্সি চড়ে ডেস্টিনেশানে পৌঁছল। কিছুক্ষণ বাদেই রিংটোনে বোঝা গেল বাবু ফোন ফেলে গিয়েছে, সহৃদয় ট্যাক্সিওয়ালা ফোনে কথা বলে বারমালিকের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে সেই ফোন। বারমালিকের পরিবার লোকটিকে ধন্যবাদ দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, বাবু কোথায় নামলেন, ট্যাক্সিওয়ালা বললেন- জী ম্যাডাম সোনাগাছি।
সোনাগাছি ভ্রমণে গিয়েছি আমি আর বন্ধু, নাম বলব না। একটা ঘরে তিনটে খাট, কোনায় একটা সরু নালা, দাঁড়িয়ে মোতে বেশ্যারা, ঝটপট। আর এই যে আমি খাটে, তাকে বাল থাক বলে নেমে দূরে ডিম লাইটের আলোয় দাঁড়িয়ে দেখি ইনশাল্লাহ এ কী সেট! তিনটে সাদা পর্দা, ফ্যানের হাওয়ায় দুলছে, আর নানা ছন্দে উঠছে নামছে ছটা শরীর, কোনও আবেগ নেই, ধূপকাঠি মুতের গন্ধ ছাড়া কোনও গন্ধও নেই। এত ভাল সেট ডিজাইন আমি আর কোনও থিয়েটারে দেখিনি।
৬
অফিসে নাইট শিফটের পর শুরু হত ভ্রমণ।
অফিসের গাড়ি চড়ে ৩০ কিলোমিটার দূরের বাড়ি ফেরা বিটি রোড ভ্রমণ। একেকদিন একেকজন।
প্রিয় সওয়ারি শৌভিক রাতে ক্যাব চালায়, দিনে পিএইচডি, যাদবপুর, ইংরেজি, প্রিয় ছবি
গ্যাসপার নোয়ার ইরিভারসিবল। আর একজন আছে, নাম মনে আসছে না। ভবানী ভবনের গাড়ি
চালাত। এখনও টাকা মেটায়নি ভবানী ভবন। দিনে নবান্নর গাড়ি, রাতে আমাদের অফিসের
গাড়ি চালিয়ে সে শুতে যায় ভবানী ভবনে। এই ভাবে পাওনা টাকা কাটাচ্ছে সে।
৭
নকশাল ছেলেরা নেই। এত বাঙালি পাহাড় বেড়াতে যাচ্ছে এভারেস্টেও সিগনাল সিস্টেম বসাতে হবে। আমি সুস্থ হব ভেবে যে আমাকে দুইবার পাহাড় আর একবার লাটাগুড়ি নিয়ে গিয়েছে, সে আমাকে বাইসন ভাবছে আজকাল। আর আমার মৃত বন্ধু বসন-উড়ন দুই ধরণের তুবড়ির ওস্তাদ ছিল। তাই মধ্য রাতে পাহাড়ে গিয়ে আমার বারবার মনে হচ্ছিল বুবাইয়ের স্মুথ হাতে উড়ন তুবড়ি হয়ে চলে যাই তারাদের কিচাইংয়ে। অনেক কষ্টে ফিরে এখন আমি ট্যাভার্ন ছাড়া আর কোথাও যাচ্ছি না। নীচে বাংলা, ওপরে ইংলিশ।
(খোঁপা ভরে আছে তারার ধুলোয়, মাই গুডনেস, দেবারতি মিত্র, ডাইগ্রেস করছি। এবার কাটি)
৮
৭
নকশাল ছেলেরা নেই। এত বাঙালি পাহাড় বেড়াতে যাচ্ছে এভারেস্টেও সিগনাল সিস্টেম বসাতে হবে। আমি সুস্থ হব ভেবে যে আমাকে দুইবার পাহাড় আর একবার লাটাগুড়ি নিয়ে গিয়েছে, সে আমাকে বাইসন ভাবছে আজকাল। আর আমার মৃত বন্ধু বসন-উড়ন দুই ধরণের তুবড়ির ওস্তাদ ছিল। তাই মধ্য রাতে পাহাড়ে গিয়ে আমার বারবার মনে হচ্ছিল বুবাইয়ের স্মুথ হাতে উড়ন তুবড়ি হয়ে চলে যাই তারাদের কিচাইংয়ে। অনেক কষ্টে ফিরে এখন আমি ট্যাভার্ন ছাড়া আর কোথাও যাচ্ছি না। নীচে বাংলা, ওপরে ইংলিশ।
(খোঁপা ভরে আছে তারার ধুলোয়, মাই গুডনেস, দেবারতি মিত্র, ডাইগ্রেস করছি। এবার কাটি)
৮
প্রথমে ফাঁকা ধানমাঠে হাওয়ার মাঝে একা দাঁড় করিয়ে কারা
যেন চলে যায়। তারপর হাওয়ায় ভেসে আসে একের পর এক গন্ধ। লোহার আঙটি ছিল তোমার হাতে,
তুমি এর,তাঁর
বাড়িতে বেডসোর রোগীর সেবা করতে, হাতে
করে কাচাতে গু মুত। বিকেলে আলুকাবলি,
টক জল বেশি করে। মনে হয় মুখের কাছে তুমি আঙটিটা
ঘোরাচ্ছো গোলগোল করে। যার যেমন মুদ্রাদোষ। মা শুতে এলে মায়ের গায়ে সরষের তেলের
ঝাঁঝ, এই
বুঝি চিটচিট ফোঁড়ন। সে গন্ধও এবার ফিরে ফিরে আসবে,
তেলচিটে গন্ধ আর মনে হবে আমি বাটি আকড়ে আছি তুমি
কইমাছ। আমার গায়ের থেকে কালো তেলাকইয়ের কষা গন্ধও উঠছে। কেঁচো কিলবিল মাটির মধ্যে একটা ভুরভুর গন্ধ আমি
পাই এসময়৷ আর তারপর ভোঁ। আমি ঢিল দিই, মাঝে
মাঝে টেনেও খেলি, যে
সুতোয় যেমন, লুদ্দিতে
টেনে খেলতে হয়, খিঁচে
টান। শরীর হালকা হালকা,
দেড়তে ঘুড়ি,
শুনেছি অঞ্জুর ভাই ওড়ায়। আমি কাচের গুড়ো আর গাবের
গন্ধ পাচ্ছি, মাঞ্জা,
আর স্নানের জলে ধুয়ে যাচ্ছে তোমার শরীর। সমস্ত
জন্তু দিনের শেষে গুহায় ঢুকে যেতে চায়, অন্ধকার,
ওম, আমার
শরীর ঠান্ডা করো মাধব, তোমায়
ডাকতে গেছি বিকেলে, চোখ
ভাল করে দাও গো মাধব, বেদানামাসির
বাড়ি, বেদানা
মাসির বাড়িতে তেলচিটে গন্ধ আর বিজয় খপ করে খাবলা দিয়ে ধরেছে আমার জিওল মাছ,
আমার ইচ্ছে ছিল ছোটুবটু দুই ভাইয়ের মত অনেকের স্নান
দেখার, তাই
আমি স্নান দেখি, একটানা
স্নান আর ছুট ছুট দে দে ছুট, টানামানি,
হেবি প্যাঁচ,
যেন ডুবকিতে চাটি পড়ছে,
এত উতরোল, মা
একবার উঠে পড়েছিল, থাবড়া
খেয়ে বুঝলাম, যাইহোক
মনে হয় খুব জোর বাজনা বাজছে আর হাতে কালো কই,
মনে হয় বৃষ্টি এসে ধুয়ে দিক শরীরের শ্যাওলা,
আমি জলে ছেড়ে দেব কইমাছ,
অন্ধকার, ফট্,
আলোর মত ঝিলিক,
বালব ভেঙে গেছে গো চোখে,
আলো ছাড়া কিছুই দেখিনা,
মনে হয় তোমার শরীরে আমি গাছ হয়ে গেছি,
ভলকে ভলকে বেরোচ্ছে বীজ,
রক্ত, আমার
চোখ, দৃষ্টি ফোঁটা ফোঁটা,
পর্দার ওপার থেকে বেরিয়ে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে হরিণ।
নাম গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন যে কোনও অন্ধ
ছেলের হাত মারার যাত্রাটা এমন, আমি কথা বলে জেনেছি।
No comments:
Post a Comment