যেখান
থেকে শুধুই পিছনে যাওয়া যায়, তেমন উদ্যমহীন সকালগুলোয় আমি
গোলঘরে থিতু হই। জানলা সরিয়ে দেখতে পাই কীভাবে ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে ডাবের মুখ জলের আরও
কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে বিক্রেতা। বেকারি ভ্যান নিয়ে মুদিখানার সামনে থামল বাচ্চা
একটা ছেলে। গলার গামছায় লেগে আছে গ্রীষ্মের যাবতীয় সওদা। ট্রেন অবরোধ বলে
অফিসযাত্রীদের মুখে বিরক্তি। বিরক্তি লটারির দোকানেও। ফ্যানের হাওয়ায় চুপচাপ শুয়ে
আছে গার্ডারে বাঁধা টিকিটগুলো। রিকশা থেকে নেমে যারা আমার বাড়িতেও আসতে পারত, উঠে পড়ছে
বাসে। কে কোথায় নামবে, জানি। আমিও নেমে পড়ি খাট থেকে। পাশের
ঘরে গিয়ে দেখি, মেঝেয় চটা উঠে গেছে। একদিন হাত থেকে প্রেম
পড়ে গিয়েছিল। একদিন আঙুলগুলোই। কীসের থেকে এই ক্ষত হল, মনে
পড়ে না। ভয় আমাকে ক্রমশ বিস্মৃতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বেরোতে হবে। ঠিকঠাক একটা
চাকরির খোঁজে আমাকে ছুটতে হবে আপিস থেকে আপিসে। আখের রস খেয়ে ভাবতে হবে, এর চেয়ে সহজ আরাম হয় না কিছু। আরেক ফিরিয়ে দেওয়ার মুখোমুখি হয়ে, ফিরে আসতে হবে আড়াই কাঠার এই বাড়িতেই।
এতদূর
ভেবে,
হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়ি মেঝেয়। বয়স কমিয়ে আনি লোডশেডিং-এর কাছাকাছি।
লালরঙের কয়েকফুট পৃথিবী তখন আমার সামনে। আমি এই পৃথিবীর শেষ জানি। দেওয়ালের কালো
পাড়ে ধাক্কা খেয়ে স্বভাব হারিয়ে ফেলবে, মাঝারি একটা ফাটলকে
অনুমতি দেবে আরও বেড়ে যাওয়ার। আমার হাতে তখন আরও অনেকগুলো পৃথিবী। কাচের। আলোয়
তুলে ধরলে দেখা যায় ভেতরের পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র। গড়িয়ে দিই
দেওয়ালের দিকে। যেতে-যেতে লাফিয়ে ওঠে, দৌড় সেরে ফিরে আসে
হাতে। আসলে, মেঝের ওপর মার্বেল গড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে একটা
বিষণ্ণতা আছে। টানেলের মধ্যে দিয়ে ট্রেন যাওয়ার মতো। চাকরি হারানোর পর, পরের মাসে কী হবে – এমন চিন্তার মতো। মার্বেল এসব
টের পায় না। চৌকাঠ আছে বলে ভয়ও পায় না বিশেষ। শুধু, সিমেন্টের
এই মেঝেতে একদিন মার্বেল বসে যাবে – এমন সম্ভাবনায় সে
ট্রাঙ্কের পিছনে লুকিয়ে পড়ে। বুঝতে পারে, দশক বদলে গেলে
পৃথিবীও গোল থেকে সমতল হয়ে যায়। চাকরির পিছনে ছুটতে থাকা বদলায় না কেবল।
No comments:
Post a Comment