Thursday, May 30, 2019

সোমেন মুখোপাধ্যায়-এর কবিতা







ফলবিলাসী

অলক্ষ্যে বৃদ্ধ হয়ে আসা ফলন্ত গাছ
বোঁকে তার ধরেছে সহজ সম্মতি,
ফল পাড়ার কিশোরী প্রস্তাব
ফেরাতে পারে না কেউই, কোনোদিন
শিরিষ ফুলের মত নরম বিকেল বেলা,
কোলাহলহীন পুকুরঘাট
একটু পরেই রোদ নিভিয়ে দেবে
তখন ফলবিলাসী হয়ে উঠবে পাড়াগাঁর গোধূলী।

গ্রীষ্মের বন পেরিয়ে ঐ দূরে যুগীদের পাড়া
আলতা- কুমকুমে ঘরগুলি আলো মেখে থাকে
একটি বালক শ্বশুরবাড়ি খুঁজতে
‘আম কুহু কুহু’ খেলে 






বৃক্ষধবনি

পূজিত প্রহরের কিছুটা লিপ্সা লেগে থাকে
ফুলের অগ্রভাগে
শেকড় অথবা বৃক্ষচরণ চারিত হয়
উপাসনাগৃহে, নৈবেদ্য ধ্বনির সাথে।
ফুলও এক শরীর যাপন
নিভৃতি তার একমাত্র মুক্তি
বাতাস স্পর্শে হেসে ওঠা পাতার ছায়াগুলি
অবগাহনে ডেকেছে আমাদের
জল মাটি আর সূর্যালোক
যিনি একত্রে আচমন করলেন
তিনি ক্ষুধা ও ক্ষমা
তর্কে তিনি বহুদূর হেঁটে এসেছেন 





দাঁড়িপাল্লা

 যাপন আসলে প্রসিদ্ধ বাজার এক
যেখানে সুমিষ্ট জামপাকার পাশে উচ্ছে বিক্রী হয়
সস্তা খাতার পাশে গোলমরিচ থাকে
অসাবধানতায় বুকপকেটের খুচরো থাকে হারানোর জন্যেই।
বাটখারার বিপরীত পাল্লায় চাহিদা তোলা হলে
ধর্মের কাঁটাটি ঈষৎ হেলে থাকে  - মনুষ্য চরিত্রের দিকে
কারণ, মানুষ একটু বেশি পেতেই ভালোবাসে।

পুরোনো পয়সার অবয়বে থাকা বাটখারাগুলি
ঊর্ধ্বমুখী সাজানো থাকে যখন
মনে হয় এইসব হিসেব নিকেষের দায়ভার ছেড়ে
অনন্তে বিলীন হতে চায় তারা
দেখি দাঁড়িপাল্লার একদিকে সকাল ওঠে, অন্যদিকে রাত্রি
মাঝের কাঁটাটি তখন গোধূলীর দোলাচল






আছো

তোমার অনুপস্থিতির গন্ধটা টের পাই
গন্ধ তো অনেক পুরোনো, হালকা হলুদ
পানমৌরির কৌটোর মতো কিছুটা শৌখিন সময়
রেখেছি আহ্লাদ করে।
একটা অতি অল্প ছোট পাখি
সারাদিন জানালার কাঁচ ঠোকাঠুকি করে
খুলে দিই, আসতেও বলি-
কাঁচের প্রতিচ্ছবি পেরিয়ে সে আসেনা কিছুতেই।
কাঁচের গন্ধে, পালকের গন্ধ নিয়ে
জানালাটা ঠাঁই রয়ে গেছে
যেভাবে অনুপস্থিতি নিয়ে রয়ে যায় উপস্থিতিটুকু।





কবিকথা

শুকনো পাতপালার মত স্তাবকদের জড়ো করে
মাঝে মাঝে স্তুতির আগুন পোহান খ্যাতনামা কবিরা
তাঁদের ঘরের দেওয়ালে টাঙানো থাকে
ডজন খানেক মানপত্র, স্মারক আর পংক্তি লেখা ঝোলা
এই জড়ো হওয়া নিন্দাচর্চার রেওয়াজ খানায়
উঠতি কবি পথ হারান
মধ্যমানের কবি সুযোগ খোঁজেন
অলক্ষ্যে ডায়েরীর পাতায় লেখেন কাব্যবিষাদ।
 এ এক আশ্চর্য উড়ান-
রঙবাহারী মঞ্চ , একটি করে কবিতা, দুপুরে মাছ-ভাত
রাত্রিবাসে রঙিন পানীয়, বেসুরো গান, অতিরিক্ত হাততালি
মাঝরাতে বমিটমি পায়।

এই রেওয়াজ খানা থেকে বহুদূরে
প্রোথিত হল পক্ষীমাতার বিষ্ঠা, একাকী খেজুর গাছে
তারপর ভাতঘুমে হাই তুলে কবিরা দেখেন
একটি অশথচারা বেড়ে উঠছে খেজুরের বুকে

  


1 comment:

একঝলকে

ভেঙে যাওয়ার পরে- একটি উপন্যাসের পাঠপ্রতিক্রিয়া- রিমি মুৎসুদ্দি

  ‘মৃত্যুতে শোক থাকে কিন্তু সামাজিক অপযশ থাকে না । ’ ‘ মৃত্যু ’ ‘ শোক ’ ‘ অপযশ ’- একটা গোটা উপন্যাস থেকে এই তিনটে শব্দই কেন...

পছন্দের ক্রম