Friday, May 31, 2019

সর্ষের মধ্যে ভ্রমণের ভুত -রায়া গুহদাস





বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে আর সর্ষের মধ্যে ভুত । ভুতের গল্প শোনা আর জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে ভবিষ্যত জানা ছাড়াও বাঙালির আরেকটা হবি হল বেড়াতে যাওয়া ঠিক যেমন আমি বেরিয়ে পড়েছি সোলো ট্রিপে। আহাহা একা একা বেড়ানোর যে কী মজা কী করে বোঝাই ?কখনও কখনও মা বাবার কথা মনে পড়লে একলা চলো রে গেয়ে নিয়ে সে দুঃখ চাপা দিয়ে দিচ্ছি । এখন প্রশ্ন হল আমি যাচ্ছি কোথায় ? তার উত্তর হল স্বর্গ । ইয়ে মানে ভাববেন না সুইসাইড কেস আসলে যাচ্ছি ভূস্বর্গ মানে কাশ্মীর । ইতিমধ্যেই কলকাতা থেকে এরোপ্লেনে চেপে শ্রীনগরে পদার্পণ করেছি এখন এক কাশ্মীরী চালকের সাওয়ারি হয়ে চলেছি হোটেলের পথে। হোটেলের ধারণা ছিল অন্যরকম  এতো দেখি এক পেল্লাই বাড়ির মধ্যে একপাশে অতিথিশালা অন্য পাশে এক কাশ্মীরী ভদ্রলোকের সংসার । ওমা লোকগুলো কী ফর্সা ! নিশ্চয়ই আপেল খেয়ে এমন   টুকটুকে রঙ হয়েছে । এবার বাড়ি গিয়ে ভালো করে আপেল খাব আর ওই আমাদের পাড়ার শালওয়ালার কাছ থেকেও টিপস নেব। দুপুরে হালকা মধ্যাহ্নভোজন করে ঘুম তারপর বিকেলে উঠে চললাম ডাললেক্ দেখতে । ডাললেক্ যাব আর সিকারায় উঠব না তা কখনও হয় । উঠলাম সিকারায় ।সে কী  অপরূপ দৃশ্য পড়ন্ত বিকেলে ডাললেক্ এর জল যেন সোনার মত চক্‌চকে আর সাথে পাহাড়ের আলিঙ্গন, সত্যিই "তারিফ কারু ক্যা উসকি জিসনে তুমহে বানায়া"।খ্যাচাক খ্যাচাক  করে কিছু ছবি তুললাম। ডাললেক্ এ কতগুলো ভাসমান দোকান ও দেখলাম । সিকারার ভাড়া মিটিয়ে আরও খানিকটা সময় দাড়িয়ে থাকলাম পাড়ে মন্ত্রমুগ্ধের মত। রাতে মুরগি সহযোগে আহার করে বেশ তৃপ্তি পেলাম। পরদিন সকালে বেরিয়ে পড়লাম গুলমার্গের পথে । কাশ্মীর যে কত সুন্দরী সে বারংবার আমায় যাত্রাপথে  প্রমাণ করতে লাগল । পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট বাড়ি ,গাছ, সোনালী রোদ,  দূরে পাহাড়ের চূড়ায় বরফের হাতছানি দেখতে দেখতে আমি পৌছে গেলাম গুলমার্গে । রোপওয়েতে গুলমার্গ দেখব বলে  নাচতে নাচতে গিয়ে  শুনি রোপওয়ে বন্ধ । ধুর্ ধুর্ আসাটাই বৃথা আর কোনোদিন সোলো ট্রিপে আসব না এসব ভাবছি যখন তখন আমার সারথি থুড়ি আমার ড্রাইভার দাদা নিমপাতা খাওয়ার সময়কার  মত আমার মুখ দেখে বললেন ইধার ঘোড়ে কা সাওয়ারি লে লিজিয়ে । ঘোড়াআআআআ..... আমার মুখটাও টিউবলাইট এর মত জ্বলে উঠল। অবশেষে এক ঘোড়াওয়ালা খুঁজে ঘোড়সওয়ারি করতে লাগলাম । ঘোড়াওয়ালা আমায় দূর থেকে একটা জায়গা দেখিয়ে বলল উধার যব তক্ হ্যা জান্ কী শুটিং কেলিয়ে শাহরুখ খান আয় থে ।আমি মনে মনে ভাবলাম আর এখন দেখে করব কী তাও যদি এখানে দাঁড়িয়ে সিনেমার গানে নাচতে দিত যদিও নিজেকে ক্যাটরিনার চেয়ে গব্বর সিং ই বেশি মনে হচ্ছিল । এরপর রাজার বাড়ি সহ আরও কয়েকটা স্পট দেখিয়ে আমায় নামিয়ে দিল কিন্তু আমার কী হল আমার সারা শরীর এরকম ঝাকানাকা বলে ঝাঁকুনি দিচ্ছে কেন আর ও কে আমার নাম ধরে ডাকে । ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম । চোখ খুলে দেখি কোথায় আমার  কাশ্মীর, কোথায় আমার গুলমার্গ,  কোথায় শর্মিলা ঠাকুর এতো ঘরের মধ্যে ঘর মানে মশারি তার মধ্যে আমি মশারির  বাইরে থেকে রক্তচক্ষু নিয়ে আমার মাদার ইন্ডিয়া ইয়ে মানে মা আমাকে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁকা দিচ্ছে কারণ ৯ টা বাজে অগত্যা চিরতার মত মুখ করে উঠে বসলাম আর বুঝলাম সব স্বপ্ন । স্বপ্নেও কাশ্মীর ভ্রমণ অধরাই থেকে গেল । এবার বাবাকে বলে সত্যিই কাশ্মীর যেতে হবে তবে সোলো নয় ফ্যামিলি ট্রিপ।।
                   

No comments:

Post a Comment

একঝলকে

ভেঙে যাওয়ার পরে- একটি উপন্যাসের পাঠপ্রতিক্রিয়া- রিমি মুৎসুদ্দি

  ‘মৃত্যুতে শোক থাকে কিন্তু সামাজিক অপযশ থাকে না । ’ ‘ মৃত্যু ’ ‘ শোক ’ ‘ অপযশ ’- একটা গোটা উপন্যাস থেকে এই তিনটে শব্দই কেন...

পছন্দের ক্রম