Thursday, May 30, 2019

শোভন মণ্ডল-এর কবিতা



               



দরজা
                  

পুরনো দরজার শিকলগুলো হাওয়ায় দুলছে
ডেঁয়োপিঁপড়ের গান শুনতে পাচ্ছো কি?
বারুদের রঙে চোবানো একটা মুখ ছটপট করছে দেয়ালের ক্যালেন্ডারে
ছাই উড়ছে,  ছাই..  সর্বত্র
ফেলে আসা ডাকবাক্সের ভেতর থেকে মৃত চিঠিদের কান্না ছড়িয়ে পড়ছে
অজস্র বাজপাখি গ্লাইডিং করে নেমে আসছে আধুনিক সভ্যতায়
গুজবে জন্ম নিচ্ছে এক আশ্চর্য জনমত
পতাকার অক্ষ নড়ছে
ইজিচেয়ার নড়ছে
বন্ বন্ করে ঘুরছে হাওয়া-মোরগ

আর দমকা হাওয়ায়
পুরনো দরজাটা ক্রমশ দুলছে


                                     উপশম
                          

চোখের তলায় কালির মতো যা কিছু ছুঁয়ে আছে নিদারুণ অযত্নে
সেটা কি কষ্টের ছায়া ? তুমি তার নাম জানো কি ?
ভিন্ন আবেগে ভেসে যায় ভেলাশরীর টানটান হয়ে আসে
শুকনো ঘাসের গায়ে আঙুলের টিপসইগুলো আমাকে জাগায়
সূর্যাস্তের পরে মাথার ভেতরে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে উনুন
অতলগামী শরীরের ডাকে আমি তো সেই বসে থাকি পুরনো ঘাটে
অজস্র বিষাদ নিয়ে পেরিয়ে যায় মনখারাপের ট্রেন
নীল হয়ে আসে সেই সব সর্বনাশের অমোঘ রঙ
বহুদিন পর চেনা ব্যালকনিতে উড়ে এসে বসে  বিজোড় শালিখ
যন্ত্রণায় শিরদাঁড়া কেঁপে ওঠে, জ্বলে ওঠে আগুনশিখা

তারপর সে রাতে কবিতা-বমির পর শান্ত হয়ে আসে সমস্ত শরীর


       মুহূর্ত
          
 রঙীন বেলুনে উড়ে যায় শহর          
নিথর ফুটপাথে নেমে আসে কাক
ইলেকট্রিক তারে ঝুলে আছে ঘুড়ি      
 গহন আগুনে তাতছে শরীর
রাজার রথ এইমাত্র পাড়ি দিল দীর্ঘ সড়কে
বাদামী লাইন ধরে মিলিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের ট্রাম
কয়েকটা ভিখারি  শুয়ে আছে গাছতলায়  
চোখে তাদের বরফের কিউব
অশান্ত হাওয়ায় ঝরে যায় কৃষ্ণচূড়ার পাতা
পাঁচিলের গায়ে লেগে বাহারী রঙ
খোলাচুলে ঝুলে থাকে উড়ালপুল    

এই ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে মুহূর্ত-বিন্দু
আর একটা ঢাউস সভ্যতা খুঁটে খাচ্ছে সোনালী বিকেল...




   মেয়েকে চিরকূট
     

যে দিন তুই বন্ধ করে দিলি ঘরের দরজা
অভিমানে ভিজিয়ে ফেললি বালিশ
যেদিন তুই রেলিং ধরে তাকিয়ে থাকিস দূরে
দাঁতের কোণে চেপে রাখিস ঠোঁট
যে দিন তুই ইশারায় মিলিয়েছিলিস কথা
চোখের কোণে হারিয়েছিলিস ভাষা
যে দিন তুই আঙুল ছেড়ে হেঁটেছিলিস পথ
বইয়ের  পাতায় লুকিয়েছিলিস চিঠি
সেই দিন... সেই দিন... সেই দিন বুঝেছি
তুই তো আর সেই ছোট্টটি নেই  !

                   শব্দের বাগান
                             
      
আমাদের আঙুলের নিভৃত ঘ্রাণে মেশে সেইসব আলেয়া
পথের প্রান্তে শুধু ঘুমন্ত বিকেলের অসুখ জেগে থাকে
উপসর্গের মতো তীব্র প্রতীয়মান আলো
আজও ক্লেদ ও ক্লান্তির দাগ মেলে রাখে
এইসব বিষন্নতা আসলে হারানো শব্দের বাগান
যেখানে ফুল নয়, ছড়ানো সুপ্ত কবিতার আগ্নেয়গিরি

আমরা যারা দুবেলা কবিতা খেয়ে বেঁচে থাকি
ভরপেট ঢেকুরের সাথে বেরিয়ে আসে গরম লাভা









No comments:

Post a Comment

একঝলকে

ভেঙে যাওয়ার পরে- একটি উপন্যাসের পাঠপ্রতিক্রিয়া- রিমি মুৎসুদ্দি

  ‘মৃত্যুতে শোক থাকে কিন্তু সামাজিক অপযশ থাকে না । ’ ‘ মৃত্যু ’ ‘ শোক ’ ‘ অপযশ ’- একটা গোটা উপন্যাস থেকে এই তিনটে শব্দই কেন...

পছন্দের ক্রম