নতুন করে পাওয়ার নেশায়
ছুটে যাই ক্ষণে ক্ষণে। চেনা পরিমন্ডলের সীমান্ত ডিঙিয়ে একটু উঁকি দিলেই দেখা যায়
নৈশব্দের আকিঁবুকি হাতছানি দিচ্ছে । শুধু শোনা যায় নিরিবিলি পাঠশালায় গাংচিল,
শঙ্খচিলসহ অনেক নাম অজানা পাখিদের ধারাপাত আর গুরুমশাই
সমুদ্রের রাশভারি গম্ভীর স্বর। কাঙাল বাতাসের নোনা তৃষ্ণা হাতড়ে বেড়ায়
সুভাষিনী নরম ছোঁয়া।
পুরী বালুতটের দক্ষিণ
দিক বরাবর হেঁটে গেলে পৌঁছানো যায় শেষ সীমানায়
ধাওরিয়া নদীর ঘোলা জলের
মন্থর চলন মিশে গিয়েছে উত্তাল সমুদ্রের নীল গভীরে।
জায়গাটি মোহানা নামে পরিচিত । মোহনা
মানেই মিলনস্থল। আর এই মিলনস্থলেই সৃষ্টি হয় হিল্লোল। দুটি ভিন্ন রঙ ঢঙের জলরাশি
অতি সহজেই মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।
সমুদ্রের উন্মুক্ত
কন্ঠস্বরে গমগম করছে চারদিক। প্রকৃতিই যেন এখানে বক্তা। বিপুল জলরাশির উচ্ছ্বাস
অনায়াসেই ফেনা হয়ে যায়। দূরে দেখা যায় নুলিয়াদের নিত্যযাপনের মাছ ধরার চিত্র।
ঢেউয়ের তালে নেচে ওঠে ছোট ছোট ডিঙি। বালুতট জুড়ে ঝিনুকের গালিচা পাতা। সম্পূর্ণ- অসম্পূর্ণ
ঝিনুকের খোলক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বালুতট জুড়ে। ধাওরিয়া নদীর বুকেও জাল ফেলে মাছের
অপেক্ষায় স্থানীয়রা।
নিঃশ্বাসের ভিড় থেকে বেরিয়ে এসে
নির্জন প্রকৃতির সামনে নিজেকে মেলে ধরার উত্তম জায়গা হল এই মোহনা। ঝাউবনের জলছবি
ফুটে উঠেছে বালুচর জুড়ে। থেকে থেকে বক, সারসের ঝাঁক উড়ে যায় সমুদ্রের ওপর দিয়ে।
চিরাচরিত আড়ম্বর থেকে
পালিয়ে এসে এখানে থাকাও যায়। বালুতটের কান ঘেঁষে যাওয়া রাস্তা দিয়ে সারি সারি
হোটেল পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্রমুখী ব্যালকনিতে বসে দিব্যি কেটে যাবে বেলা। সন্ধের
পর সমুদ্রের মুখোমুখি বসে চা পান। রাতের অন্ধকার ভেদ করে আসে জেলেদের ডিঙির টিমটিম
আলো। ঠিক যেন জোনাকির বিন্দু বিন্দু স্পৃহা। আর কোজাগরী চাঁদ যেন এক মধুময়ী রাতের অনুঘটক।
করাতের চকচকে দাঁতের মতো হেসে উঠছে ঢেউয়ের ফেনা। আর নীরবে ধাওরিয়া নদী রাতের
পাঁচালি গুনগুন করে। আঁশটে নোনা গন্ধের বাতাস এলোমেলো করে দিয়ে যায় চুলের রাশি। সব মিলিয়ে
এক অচিন পুরের পথিক আমি!
ঠিকানা:
পুরীর স্বর্গদ্বার থেকে
দক্ষিণে ৪ কিমি দূরে মোহানা অবস্থিত। অটো বা টোটো-র মাধ্যমে খুব সহজেই পৌঁছানো
যায়। সময় লাগে ১৫-২০ মিনিট। সী-বীচ ধরে হাঁটা পথেও ঘুরে আসা যায়।
No comments:
Post a Comment